প্রতিবেদন হলো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর তথ্যভিত্তিক লেখা যা কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণ করে। এটি তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। প্রতিবেদন বিভিন্ন ধরণের হতে পারে, যেমন গবেষণা প্রতিবেদন, বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন, ব্যবসায়িক প্রতিবেদন, সরকারি প্রতিবেদন ইত্যাদি।
এই পোস্টে আপনি যা যা জানতে পারবেন:
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
প্রতিবেদন লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করা, বিশ্লেষণ করা এবং প্রস্তাবনা দেওয়া। প্রতিবেদন লিখতে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম এবং ধাপ অনুসরণ করা জরুরি। নিচে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও ধাপগুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো:
১. শিরোনাম নির্বাচন
প্রতিবেদনের শিরোনামটি সঠিক এবং সুনির্দিষ্ট হতে হবে যাতে পাঠক শিরোনাম দেখে প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে।
২. ভূমিকা
ভূমিকা অংশে প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য, বিষয়বস্তু এবং প্রতিবেদন লেখার কারণ উল্লেখ করা হয়। এতে পাঠকের আগ্রহ বৃদ্ধির পাশাপাশি পুরো প্রতিবেদনের একটি সারমর্ম পাওয়া যায়।
৩. বিষয়বস্তু
প্রতিবেদনের মূল অংশে বিষয়বস্তুর বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়। এটি সাধারণত কয়েকটি উপশিরোনাম বা অনুচ্ছেদে ভাগ করা হয়।
- তথ্য সংগ্রহ: প্রতিবেদন লেখার জন্য সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা জরুরি। তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন উৎস যেমন, বই, জার্নাল, ইন্টারনেট, সার্ভে ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।
- বিশ্লেষণ: সংগ্রহীত তথ্যের বিশ্লেষণ করা হয়। এতে তথ্যের অর্থ, পরিসংখ্যান এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
- উপস্থাপন: বিশ্লেষিত তথ্য উপস্থাপন করার সময় টেবিল, চার্ট, গ্রাফ ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে যাতে তথ্য সহজে বুঝতে সুবিধা হয়।
৪. উপসংহার
উপসংহারে পুরো প্রতিবেদনের সারমর্ম, প্রধান তথ্য এবং পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়। এছাড়া প্রতিবেদনের প্রধান ফলাফল এবং পরামর্শ দেওয়া হয়।
৫. সুপারিশ
প্রতিবেদন শেষে সুপারিশ অংশে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কিছু প্রস্তাবনা বা সুপারিশ দেওয়া হয় যা পাঠকের জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করতে পারে।
৬. রেফারেন্স
রেফারেন্স অংশে প্রতিবেদনে উল্লেখিত সকল তথ্যের উৎসগুলো সঠিকভাবে উল্লেখ করা হয়। এতে তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পায় এবং প্রয়োজনে পাঠকরা আরও বিস্তারিত জানতে পারেন।
৭. সংযুক্তি
যদি কোনো অতিরিক্ত তথ্য, ডকুমেন্ট, বা উপকরণ থেকে থাকে যা মূল প্রতিবেদনের অংশ নয় কিন্তু প্রাসঙ্গিক, তবে তা সংযুক্তিতে দেওয়া হয়।
উদাহরণস্বরূপ প্রতিবেদন
শিরোনাম: বাংলাদেশের বেকারত্ব সমস্যা এবং এর সমাধান
ভূমিকা
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে বেকারত্ব একটি প্রধান সমস্যা। এই প্রতিবেদনটি বেকারত্বের কারণ, এর প্রভাব এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করবে।
বিষয়বস্তু
বেকারত্বের কারণ
বাংলাদেশে বেকারত্বের মূল কারণগুলো হলো:
- শিক্ষার মান ও কর্মসংস্থানের অভাব
- প্রযুক্তিগত উন্নয়নের অভাব
- অর্থনৈতিক নীতি ও পরিকল্পনার অভাব
বেকারত্বের প্রভাব
বেকারত্বের ফলে সমাজে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়:
- অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা
- সামাজিক অস্থিরতা ও অপরাধ বৃদ্ধি
সম্ভাব্য সমাধান
বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু সুপারিশ:
- শিক্ষার মানোন্নয়ন
- প্রযুক্তিগত উন্নয়ন
- সঠিক অর্থনৈতিক নীতি ও পরিকল্পনা
উপসংহার
বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সঠিক নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
সুপারিশ
- প্রযুক্তিগত শিক্ষার উপর জোর দেওয়া
- কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি
- সরকারের সঠিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন
রেফারেন্স
- জনসংখ্যা ও কর্মসংস্থান প্রতিবেদন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০২৩।
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা, ড. মোহাম্মদ আলী, ২০২২।
সংযুক্তি
- সংযুক্তি ১: বেকারত্বের পরিসংখ্যান (২০২০-২০২৩)
- সংযুক্তি ২: বেকার যুবকদের সাক্ষাৎকারের সারাংশ
এই প্রতিবেদনে বেকারত্বের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি পাঠকের জন্য সমস্যার গভীরতা বোঝা এবং এর সমাধানের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
কিছু টিপস:
- প্রতিবেদন লেখার শুরু করার আগে প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে নিন।
- প্রতিবেদনের পাঠক কে হবে তা মনে রেখে লিখুন।
- প্রতিবেদন সংক্ষিপ্ত এবং সারসংক্ষেপে লিখুন।
- প্রতিবেদনের ভাষা নিরপেক্ষ এবং বস্তুনিষ্ঠ রাখুন।
- প্রতিবেদন আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ছবি, গ্রাফ এবং চার্ট ব্যবহার করুন।
আরো পড়ুন: উপসংহার লেখার নিয়ম
উপসংহার:
প্রতিবেদন লেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। উপরে উল্লেখিত নিয়মগুলি অনুসরণ করে আপনি একটি ভালো প্রতিবেদন লিখতে পারবেন।
আরও তথ্যের জন্য:
সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
সংবাদ প্রতিবেদন হলো কোনো ঘটনা বা বিষয়ের বস্তুনিষ্ঠ ও সত্য ঘটনা নির্ভর বিবরণ। একটি ভালো সংবাদ প্রতিবেদন পাঠককে সঠিক তথ্য প্রদানের পাশাপাশি আকর্ষণীয় ও প্রাসঙ্গিক হতে হয়। নিচে সংবাদ প্রতিবেদন লেখার কিছু নিয়ম দেওয়া হলো:
১. শিরোনাম (Headline):
- সংবাদ প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো শিরোনাম। এটি সংক্ষিপ্ত, স্পষ্ট এবং আকর্ষণীয় হতে হবে।
- শিরোনামে সংবাদের মূল বিষয়বস্তু ফুটে উঠতে হবে।
- শিরোনামে ক্রিয়া পদ ব্যবহার করা যেতে পারে।
২. সূচনা (Lead):
- প্রতিবেদনের প্রথম অনুচ্ছেদকে সূচনা বলে। এটি সংবাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোকে সংক্ষেপে তুলে ধরে।
- সূচনায় কে, কী, কখন, কোথায়, কেন এবং কিভাবে (5W1H) এর উত্তর দেওয়া উচিত।
- সূচনা যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত এবং সহজবোধ্য হওয়া উচিত।
৩. মূল অংশ (Body):
- সূচনার পরের অনুচ্ছেদগুলোতে সংবাদের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
- তথ্যগুলোকে গুরুত্ব অনুসারে সাজাতে হবে।
- তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
- প্রয়োজনে সাক্ষাৎকার, পরিসংখ্যান, প্রতিবেদন ইত্যাদির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
৪. উপসংহার (Conclusion):
- প্রতিবেদনের শেষ অনুচ্ছেদে সংবাদের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়।
- উপসংহারে সংবাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বা প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা যেতে পারে।
৫. ভাষা (Language):
- সংবাদ প্রতিবেদনের ভাষা সহজ, সরল এবং সাবলীল হওয়া উচিত।
- কঠিন শব্দ বা জটিল বাক্য এড়িয়ে চলা উচিত।
- ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- নিরপেক্ষ এবং বস্তুনিষ্ঠ ভাষা ব্যবহার করতে হবে।
৬. অন্যান্য (Others):
- প্রতিবেদনে সঠিক বানান এবং ব্যাকরণ ব্যবহার করতে হবে।
- প্রতিবেদনের শুরুতে সংবাদ সংস্থার নাম এবং প্রতিবেদকের নাম উল্লেখ করতে হবে।
- প্রতিবেদনের শেষে তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
উদাহরণ:
শিরোনাম: ঢাকায় বইমেলা শুরু, উৎসবমুখর পাঠক
সূত্র: ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ (সংবাদ সংস্থা) – আজ থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বইপ্রেমী মানুষের আনাগোনায় মেলা প্রাঙ্গণ ইতিমধ্যেই উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে।
মূল অংশ: প্রথম দিনেই মেলায় দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন বয়সী মানুষেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মেলায় এসেছেন। প্রকাশকরাও নতুন নতুন বই নিয়ে পাঠকদের সামনে হাজির হয়েছেন।
… (বিস্তারিত তথ্য)
উপসংহার: আগামী এক মাসব্যাপী এই বইমেলা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি মানুষের আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদক: [তোমার নাম]
এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে তুমি একটি আকর্ষণীয়, তথ্যপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক সংবাদ প্রতিবেদন লিখতে পারবে।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন হলো কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, অর্জন, সমস্যা, পরিকল্পনা ইত্যাদি সম্পর্কে লিখিত বিবরণ। এটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য বা বাহ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার কিছু সাধারণ নিয়ম নিচে দেওয়া হলো:
১. শিরোনাম (Title):
- প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে প্রকাশ করে এমন একটি শিরোনাম দিতে হবে।
- শিরোনামটি স্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট এবং তথ্যবহুল হওয়া উচিত।
২. প্রতিবেদনের তারিখ (Date):
- প্রতিবেদনটি যে তারিখে লেখা হয়েছে সেই তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
৩. প্রতিবেদকের নাম ও পদবী (Name and Designation of the Reporter):
- প্রতিবেদন লেখকের নাম এবং প্রতিষ্ঠানে তার পদবী উল্লেখ করতে হবে।
৪. প্রতিবেদন প্রেরণের ঠিকানা (Address of Submission):
- প্রতিবেদনটি যে ব্যক্তি বা বিভাগের কাছে প্রেরণ করা হচ্ছে তার নাম এবং পদবী উল্লেখ করতে হবে।
৫. ভূমিকা (Introduction):
- প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভূমিকা দিতে হবে।
- ভূমিকায় প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য, প্রেক্ষাপট এবং গুরুত্ব তুলে ধরা যেতে পারে।
৬. মূল অংশ (Main Body):
- প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু এখানে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
- তথ্যগুলোকে যৌক্তিকভাবে সাজাতে হবে।
- প্রয়োজনে উপ-শিরোনাম ব্যবহার করা যেতে পারে।
- তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রয়োজনে সূত্র উল্লেখ করতে হবে।
৭. উপসংহার (Conclusion):
- প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ এবং প্রধান বিষয়গুলোর পুনরাবৃত্তি এখানে করতে হবে।
- প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য অনুযায়ী সুপারিশ বা পরামর্শ প্রদান করা যেতে পারে।
৮. স্বাক্ষর (Signature):
- প্রতিবেদনের শেষে প্রতিবেদকের স্বাক্ষর দিতে হবে।
৯. ভাষা (Language):
- প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদনের ভাষা আনুষ্ঠানিক হওয়া উচিত।
- ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- বানান এবং ব্যাকরণের সঠিকতা নিশ্চিত করতে হবে।
১০. ফরম্যাট (Format):
- প্রতিষ্ঠানিক প্রতিবেদনের জন্য একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট অনুসরণ করা উচিত।
- ফরম্যাটে সাধারণত প্রতিষ্ঠানের লোগো, লেটারহেড, পৃষ্ঠা নম্বর ইত্যাদি থাকে।
উদাহরণ:
শিরোনাম: বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০২৩ এর প্রতিবেদন
প্রতিবেদনের তারিখ: ১৫ জুলাই ২০২৪
প্রতিবেদক: [তোমার নাম], ক্রীড়া সম্পাদক
প্রতিবেদন প্রেরণের ঠিকানা: অধ্যক্ষ, [প্রতিষ্ঠানের নাম]
ভূমিকা: [প্রতিষ্ঠানের নাম] এর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০২৩ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রতিবেদনে প্রতিযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো।
মূল অংশ:
- প্রতিযোগিতার তারিখ ও স্থান:
- অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা:
- আয়োজিত খেলাধুলার তালিকা:
- বিজয়ীদের নাম:
- সমস্যা ও সুপারিশ:
উপসংহার: সার্বিকভাবে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা-২০২৩ একটি সফল আয়োজন ছিল।
স্বাক্ষর: [তোমার স্বাক্ষর]
আরও কিছু টিপস:
- প্রতিবেদন লেখার আগে বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
- প্রতিবেদনটি সংক্ষিপ্ত এবং সহজবোধ্য রাখুন।
- প্রতিবেদনে ব্যবহৃত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করুন।
- প্রতিবেদনের বানান এবং ব্যাকরণের সঠিকতা যাচাই করুন।
এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে আপনি একটি সুন্দর, তথ্যপূর্ণ এবং কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লিখতে পারবেন।
নিজস্ব প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
নিজস্ব প্রতিবেদন হলো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিজের অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ, গবেষণা বা অন্য কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে লেখা প্রতিবেদন। এটি কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা, সমস্যা, বিষয় বা প্রকল্পের উপর ভিত্তি করে লেখা হতে পারে। নিজস্ব প্রতিবেদন লেখার কিছু সাধারণ নিয়ম নিচে দেওয়া হলো:
১. শিরোনাম (Title):
- প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে প্রকাশ করে এমন একটি শিরোনাম দিন।
- শিরোনামটি স্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট এবং আকর্ষণীয় হওয়া উচিত।
২. ভূমিকা (Introduction):
- প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভূমিকা দিন।
- ভূমিকায় প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য, প্রেক্ষাপট এবং গুরুত্ব তুলে ধরুন।
- প্রতিবেদনে কী কী বিষয় আলোচনা করা হবে তা উল্লেখ করুন।
৩. মূল অংশ (Main Body):
- প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু এখানে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করুন।
- তথ্যগুলোকে যৌক্তিকভাবে সাজান।
- প্রয়োজনে উপ-শিরোনাম ব্যবহার করুন।
- তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করুন এবং প্রয়োজনে সূত্র উল্লেখ করুন।
- নিজের অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ বা গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করুন।
৪. উপসংহার (Conclusion):
- প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ এবং প্রধান বিষয়গুলোর পুনরাবৃত্তি করুন।
- প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য অনুযায়ী সুপারিশ বা পরামর্শ প্রদান করুন।
- প্রতিবেদনের ফলাফল বা প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করুন।
৫. তথ্যসূত্র (References):
- প্রতিবেদনে ব্যবহৃত তথ্যসূত্রের একটি তালিকা প্রদান করুন।
- তথ্যসূত্রগুলো সঠিকভাবে উদ্ধৃত করুন।
৬. ভাষা (Language):
- প্রতিবেদনের ভাষা সহজ, সরল এবং সাবলীল হওয়া উচিত।
- কঠিন শব্দ বা জটিল বাক্য এড়িয়ে চলুন।
- ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করার সময় “আমার মনে হয়,” “আমার বিশ্বাস” ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করতে পারেন।
- বানান এবং ব্যাকরণের সঠিকতা নিশ্চিত করুন।
৭. ফরম্যাট (Format):
- প্রতিবেদনের জন্য একটি সুসংগত ফরম্যাট অনুসরণ করুন।
- ফরম্যাটে সাধারণত শিরোনাম, ভূমিকা, মূল অংশ, উপসংহার, তথ্যসূত্র ইত্যাদি অংশ থাকে।
- প্রতিবেদনের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রতিবেদনের শিরোনাম, প্রতিবেদকের নাম, তারিখ ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ করুন।
৮. অন্যান্য (Others):
- প্রতিবেদন লেখার আগে বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
- প্রতিবেদনটি সুসংগঠিত এবং সুপাঠ্য করার জন্য ছোট ছোট অনুচ্ছেদে ভাগ করুন।
- প্রতিবেদনের শুরুতে একটি সারসংক্ষেপ বা বিষয়বস্তুর সূচি প্রদান করতে পারেন।
- প্রতিবেদনের শেষে একটি পরিশিষ্ট যোগ করতে পারেন যেখানে অতিরিক্ত তথ্য, ছবি, চিত্র ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে আপনি একটি সুন্দর, তথ্যপূর্ণ এবং কার্যকর নিজস্ব প্রতিবেদন লিখতে পারবেন।
তদন্ত প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
তদন্ত প্রতিবেদন হলো কোনো ঘটনা, অভিযোগ, সমস্যা বা অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্তের পর লিখিত আকারে উপস্থাপিত বিবরণ। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যা সমাধান এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। একটি সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন লেখার জন্য নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করা জরুরি:
১. শিরোনাম (Title):
- প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে প্রকাশ করে এমন একটি শিরোনাম দিন।
- শিরোনামটি স্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট এবং তথ্যবহুল হওয়া উচিত। উদাহরণ: “অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন”
২. ভূমিকা (Introduction):
- তদন্তের প্রেক্ষাপট, উদ্দেশ্য এবং গুরুত্ব তুলে ধরুন।
- তদন্তের পরিধি এবং সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করুন।
- তদন্ত কমিটির সদস্যদের নাম এবং পদবী উল্লেখ করুন।
৩. তদন্তের পদ্ধতি (Methodology):
- তদন্তের সময়কাল এবং স্থান উল্লেখ করুন।
- তদন্তের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতি (যেমন: সাক্ষাৎকার, নথিপত্র পর্যালোচনা, সরেজমিন পরিদর্শন) বর্ণনা করুন।
- তদন্তের সময় সংগৃহীত তথ্যের উৎস (যেমন: সাক্ষী, নথিপত্র, ভিডিও ফুটেজ) উল্লেখ করুন।
৪. তথ্য উপস্থাপন (Findings):
- তদন্তের ফলাফল যৌক্তিকভাবে এবং কালানুক্রমিকভাবে উপস্থাপন করুন।
- তথ্যগুলোকে সুসংগঠিত করতে উপ-শিরোনাম ব্যবহার করুন।
- প্রতিটি তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করুন এবং প্রয়োজনে প্রমাণ উপস্থাপন করুন।
- তথ্য উপস্থাপনের সময় নিরপেক্ষতা বজায় রাখুন এবং ব্যক্তিগত মতামত এড়িয়ে চলুন।
৫. বিশ্লেষণ ও সুপারিশ (Analysis and Recommendations):
- তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করুন এবং সমস্যার কারণ চিহ্নিত করুন।
- সমস্যা সমাধানের জন্য যৌক্তিক এবং বাস্তবসম্মত সুপারিশ প্রদান করুন।
- সুপারিশগুলো সুনির্দিষ্ট, পরিমাপযোগ্য এবং সময়সীমা নির্ধারিত হওয়া উচিত।
৬. উপসংহার (Conclusion):
- প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ এবং প্রধান বিষয়গুলোর পুনরাবৃত্তি করুন।
- তদন্তের ফলাফলের গুরুত্ব এবং প্রভাব তুলে ধরুন।
৭. পরিশিষ্ট (Appendix):
- প্রতিবেদনের সাথে প্রাসঙ্গিক অতিরিক্ত তথ্য, নথিপত্র, ছবি, চিত্র ইত্যাদি পরিশিষ্ট হিসেবে সংযুক্ত করুন।
৮. ভাষা (Language):
- প্রতিবেদনের ভাষা আনুষ্ঠানিক, স্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট এবং বস্তুনিষ্ঠ হওয়া উচিত।
- ব্যক্তিগত মতামত এড়িয়ে চলুন এবং তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ ও সুপারিশ করুন।
- বানান এবং ব্যাকরণের সঠিকতা নিশ্চিত করুন।
৯. ফরম্যাট (Format):
- প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি সুসংগত ফরম্যাট অনুসরণ করুন।
- সাধারণত তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানের লোগো, লেটারহেড, পৃষ্ঠা নম্বর, তারিখ ইত্যাদি থাকে।
১০. অন্যান্য (Others):
- প্রতিবেদন লেখার আগে তদন্তের সকল তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং যাচাই করুন।
- প্রতিবেদনটি সুসংগঠিত এবং সুপাঠ্য করার জন্য ছোট ছোট অনুচ্ছেদে ভাগ করুন।
- প্রতিবেদনের শুরুতে একটি সারসংক্ষেপ বা বিষয়বস্তুর সূচি প্রদান করুন।
এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে আপনি একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং তথ্যপূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন লিখতে পারবেন যা সমস্যা সমাধান এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম class 7
প্রতিবেদন হলো কোনো ঘটনা, সমস্যা, অনুষ্ঠান বা বিষয়ের বর্ণনা। সপ্তম শ্রেণিতে তোমাদের প্রতিবেদন লেখার সময় কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে।
প্রতিবেদনের অংশ:
-
শিরোনাম: প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে প্রকাশ করে এমন একটি শিরোনাম দিতে হবে। যেমন, “বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি,” “বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা” ইত্যাদি।
-
স্থান, তারিখ ও সময়: প্রতিবেদনের শুরুতে স্থান, তারিখ ও সময় উল্লেখ করতে হবে। যেমন, “ঢাকা, ১০ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৩টা”।
-
ভূমিকা/সূচনা: প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভূমিকা দিতে হবে। এখানে বিষয়ের গুরুত্ব, প্রেক্ষাপট ইত্যাদি তুলে ধরা যেতে পারে।
-
মূল অংশ: এটি প্রতিবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে ঘটনার বিবরণ, সমস্যার কারণ ও প্রতিকার, অনুষ্ঠানের কার্যক্রম ইত্যাদি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করতে হবে।
-
উপসংহার: প্রতিবেদনের শেষে একটি উপসংহার টানতে হবে। এখানে প্রতিবেদনের সারমর্ম সংক্ষেপে তুলে ধরা যেতে পারে।
-
প্রতিবেদকের নাম ও শ্রেণি: প্রতিবেদনের শেষে প্রতিবেদকের নাম ও শ্রেণি উল্লেখ করতে হবে।
প্রতিবেদন লেখার সময় আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে:
- সহজ-সরল ভাষা: প্রতিবেদনের ভাষা সহজ-সরল ও সাবলীল হতে হবে। কঠিন শব্দ বা জটিল বাক্য এড়িয়ে চলতে হবে।
- সঠিক তথ্য: প্রতিবেদনে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। কোনো তথ্য নিয়ে সন্দেহ থাকলে তা যাচাই করে নিতে হবে।
- নিরপেক্ষতা: প্রতিবেদন লেখার সময় নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। নিজের মতামত বা অনুভূতি প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- সংক্ষিপ্ততা: প্রতিবেদন যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত। অপ্রয়োজনীয় তথ্য বা বিবরণ এড়িয়ে চলতে হবে।
সপ্তম শ্রেণির প্রতিবেদনের উদাহরণ:
শিরোনাম: বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা
স্থান, তারিখ ও সময়: ঢাকা, ১৫ মার্চ ২০২৪, সকাল ৯টা
ভূমিকা: আমাদের বিদ্যালয়ে প্রতি বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এই প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রীড়া চর্চাকে উৎসাহিত করে এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করে।
মূল অংশ: এ বছরের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন ধরনের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে দৌড়, লম্বা লাফ, উচ্চ লাফ, শট পুট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি খেলায় শিক্ষার্থীরা উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতার শেষে বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।
উপসংহার: বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা একটি সফল আয়োজন ছিল। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রীড়া চর্চাকে উৎসাহিত করেছে এবং তাদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি করেছে।
প্রতিবেদক: [তোমার নাম], সপ্তম শ্রেণি
এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে তুমি সহজেই একটি সুন্দর ও তথ্যপূর্ণ প্রতিবেদন লিখতে পারবে।
প্রতিবেদন লেখা সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
প্রশ্ন: প্রতিবেদন এবং প্রবন্ধের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: প্রতিবেদন মূলত কোনো ঘটনা বা বিষয়ের বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ প্রদান করে, অন্যদিকে প্রবন্ধ লেখকের ব্যক্তিগত মতামত বা বিশ্লেষণ প্রকাশ করে।
প্রশ্ন: প্রতিবেদন লেখার সময় কোন কোন বিষয় মাথায় রাখা উচিত?
উত্তর: প্রতিবেদন লেখার সময় সর্বদা নিরপেক্ষতা বজায় রাখা, সঠিক তথ্য প্রদান, সহজ-সরল ভাষার ব্যবহার এবং সংক্ষিপ্ততা বজায় রাখা উচিত।
প্রশ্ন: প্রতিবেদনের শিরোনাম কেমন হওয়া উচিত?
উত্তর: প্রতিবেদনের শিরোনাম সংক্ষিপ্ত, আকর্ষণীয় এবং প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত।
প্রশ্ন: প্রতিবেদনে ছবি বা চিত্র ব্যবহার করা কি উচিত?
উত্তর: হ্যাঁ, প্রতিবেদনে ছবি বা চিত্র ব্যবহার করা যেতে পারে যদি তা প্রতিবেদনের বিষয়বস্তুর সাথে প্রাসঙ্গিক হয় এবং প্রতিবেদনকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
প্রশ্ন: প্রতিবেদন লেখার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ফরম্যাট আছে কি?
উত্তর: প্রতিবেদন লেখার জন্য বিভিন্ন ফরম্যাট রয়েছে। তবে সাধারণত উপরে উল্লেখিত নিয়মগুলো মেনে চললে যেকোনো ফরম্যাটে প্রতিবেদন লেখা যায়।