পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতির নাম ও ব্যবহার

বাংলার কৃষি সংস্কৃতিতে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যুগের সাথে সাথে প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও, ঐতিহ্যবাহী পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতি আজও অনেক গ্রামাঞ্চলে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এই লেখায় আমরা কিছু পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতির নাম ও ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করবো:

কৃষিকাজে ব্যবহৃত কিছু পুরাতন যন্ত্রপাতির নাম ও ব্যবহার:

  • ফাশ: মাটি চাষ ও সমতল করার জন্য ব্যবহৃত হত।
  • মাটি কুড়াল: মাটি কাটা, আগাছা পরিষ্কার এবং বীজ বপনের জন্য ব্যবহৃত হত।
  • বীজ বপন যন্ত্র: বীজ সারিবদ্ধভাবে বপনের জন্য ব্যবহৃত হত।
  • ধান কাটার হাতিয়ার: ধান কাটার জন্য ব্যবহৃত হত। যেমন: দাপ, কাস্তে,
  • খড় কাটার যন্ত্র: ধান কাটার পর খড় আলাদা করার জন্য ব্যবহৃত হত।
  • ধান ঝাঁড়াইয়ের যন্ত্র: ধান থেকে খড় আলাদা করার জন্য ব্যবহৃত হত। যেমন: ঝাঁটা, মই,
  • কল: পানি উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত হত। বিভিন্ন ধরণের কল ছিল, যেমন:
  • মরিচ গাছের পানি দেওয়ার যন্ত্র: পানি বা পচা সার মরিচ গাছের গোড়ায় দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হত।
  • ধান মাড়াইয়ের যন্ত্র: ঐতিহ্যবাহীভাবে ধান মাড়াই করার জন্য ব্যবহৃত হত। যেমন:
  • চাল ভাঙার যন্ত্র: ঢেঁকি, চালবাহা,
  • ফাল: মাটি চাষ ও সমতল করার জন্য ব্যবহৃত হত।
  • শাল: মাটি কুড়িয়ে ঢিলে করার জন্য ব্যবহৃত হত।
  • সারের ঝুড়ি: সার ক্ষেতে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হত।
  • আঁশ কাটার হাতিয়ার: পাট, ক্ষেতের আঁশ ইত্যাদি কাটার জন্য ব্যবহৃত হত।
  • ধান ঝাড়াইয়ের মাঠ: ধান ঝাড়াই করার জন্য ব্যবহৃত হত।
  • ধান কুঁড়ানোর যন্ত্র: ধান থেকে তুষ বিভাজন করার জন্য ব্যবহৃত হত।
  • আঁশ ভেজানোর হাওড়: পাটের আঁশ ভেজানোর জন্য ব্যবহৃত হত।
  • চাল বাটা: চাল বাটার জন্য ব্যবহৃত হত।
  • তেলের ঘানি: তেল বের করার জন্য ব্যবহৃত হত।

এছাড়াও আরও অনেক পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতি ছিল যা বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হত।

পাঁচটি কৃষি যন্ত্রপাতির নাম:

  1. ট্রাক্টর: কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত সবচেয়ে সাধারণ যন্ত্রপাতি। মাটি চাষ, বীজ বপন, ফসল কাটা, ধান বীজ বপন, পরিবহন ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়।
  2. পাওয়ার টিলার: ট্রাক্টরের চেয়ে ছোট আকারের, হালকা ওজনের যন্ত্র। ছোট জমি চাষ, মাটি উত্তোলন, আগাছা পরিষ্কার ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়।
  3. কম্বাইন হারভেস্টার: ধান, গম, পাট কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র।
  4. থ্রেশার: ধান, গম, পাট থেকে শস্য আলাদা করার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র।
  5. ইনসেক্টিসাইড স্প্রেয়ার: ফসলে কীটপতঙ্গনাশক ছিটিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র।

দুটি কৃষি যন্ত্রপাতির নাম:

১) ট্রাক্টর: ট্রাক্টর হলো একটি শক্তিশালী যন্ত্র যা কৃষিকাজের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। জমি চাষ করা, বীজ বপন করা, ফসল কাটা, ট্রেলার টানা, সেচের পানি বহন করা ইত্যাদি কাজে ট্রাক্টর ব্যবহার করা হয়। ট্রাক্টর বিভিন্ন আকারের পাওয়া যায় এবং এর দামও ভিন্ন ভিন্ন।

২) পাওয়ার টিলার: পাওয়ার টিলার হলো ট্রাক্টরের চেয়ে ছোট আকারের একটি যন্ত্র। এটিও কৃষিকাজের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। ট্রাক্টরের মতো শক্তিশালী না হলেও, পাওয়ার টিলার ব্যবহার করা সহজ এবং খরচও কম। ছোট জমি চাষ করা, বীজ বপন করা, আগাছা পরিষ্কার করা ইত্যাদি কাজে পাওয়ার টিলার ব্যবহার করা হয়।

উপসংহার:

পুরাতন কৃষি যন্ত্রপাতি বাংলার কৃষি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদিও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও ঐতিহ্যবাহী যন্ত্রপাতির গুরুত্ব অপরিসীম।

ঐতিহ্যবাহী যন্ত্রপাতির গুরুত্ব:

  • পরিবেশবান্ধব: ঐতিহ্যবাহী যন্ত্রপাতি পরিবেশের ক্ষতি করে না। এগুলো তৈরিতে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা হয় এবং চালানোর জন্য বিদ্যুৎ বা জ্বালানির প্রয়োজন হয় না।
  • সহজলভ্য: ঐতিহ্যবাহী যন্ত্রপাতি সহজেই তৈরি করা যায় এবং স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায়। এর ফলে কৃষকদের উপর অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা পড়ে না।
  • সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য: ঐতিহ্যবাহী যন্ত্রপাতি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। এগুলো আমাদের পূর্বপুরুষদের জ্ঞান ও দক্ষতার প্রতীক।
  • পর্যটন আকর্ষণ: ঐতিহ্যবাহী যন্ত্রপাতি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। এগুলো আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেয়।

সরকারের ভূমিকা:

  • ঐতিহ্যবাহী যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য সরকার পদক্ষেপ নিতে পারে।
  • কৃষকদের ঐতিহ্যবাহী যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ ও অনুপ্রেরণা প্রদান করা যেতে পারে।
  • ঐতিহ্যবাহী যন্ত্রপাতি তৈরির শিল্পকে উৎসাহিত করা যেতে পারে।

উপসংহারে বলা যায়, ঐতিহ্যবাহী কৃষি যন্ত্রপাতি কেবল অতীতের স্মৃতিচিহ্ন নয়, বরং বর্তমানেও আমাদের কৃষি ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

এই ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান ও প্রযুক্তি ধরে রাখা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব।

Leave a Comment