বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মুদ্রা প্রচলিত আছে। কিন্তু সব মুদ্রার মূল্য একই রকম নয়। কিছু মুদ্রার মূল্য অনেক বেশি, আবার কিছু মুদ্রার মূল্য অনেক কম।
এই পোস্টে আপনি যা যা জানতে পারবেন:
কোন দেশের টাকার মান বেশি
বিশ্বে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান ভিন্ন হয়, যা মূলত তাদের অর্থনীতির শক্তি, সঞ্চিত রিজার্ভ এবং বাজারের চাহিদার উপর নির্ভর করে। নিচে কিছু দেশের মুদ্রার মান তালিকাভুক্ত করা হলো, যেগুলোর মান আন্তর্জাতিক বাজারে তুলনামূলকভাবে বেশি:
১. কুয়েতি দিনার (Kuwaiti Dinar – KWD)
বিশ্বের সর্বোচ্চ মুদ্রা মান: কুয়েতি দিনার বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান মুদ্রা হিসেবে পরিচিত। এটি মার্কিন ডলারের চেয়েও বেশি মূল্যবান।
২. বাহরাইনি দিনার (Bahraini Dinar – BHD)
বাহরাইনি দিনারও অনেক শক্তিশালী মুদ্রা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে বাহরাইন একটি তেল নির্ভর অর্থনীতি যা এই মুদ্রার শক্তি বাড়িয়েছে।
৩. ওমানি রিয়াল (Omani Rial – OMR)
ওমানি রিয়ালের মানও অত্যন্ত বেশি, বিশেষ করে মার্কিন ডলারের তুলনায়। ওমানও তেল রপ্তানির কারণে মুদ্রার মান বজায় রাখতে সক্ষম।
৪. জর্ডানিয়ান দিনার (Jordanian Dinar – JOD)
যদিও জর্ডান একটি ছোট অর্থনীতি, তবে তাদের দিনারের মান আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি। এটি বেশ স্থিতিশীল এবং মার্কিন ডলারের সাথে পেগড (Pegged)।
৫. ব্রিটিশ পাউন্ড (British Pound Sterling – GBP)
ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা হল ব্রিটিশ পাউন্ড। এটি ডলারের তুলনায়ও বেশি মূল্যবান।
৬. ইউরো (Euro – EUR)
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুদ্রা ইউরো বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রা। এটি মার্কিন ডলারের পরপর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
৭. সুইস ফ্রাঁ (Swiss Franc – CHF)
সুইজারল্যান্ডের মুদ্রা সুইস ফ্রাঁও আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ শক্তিশালী। সুইজারল্যান্ডের স্থিতিশীল অর্থনীতি এবং ব্যাংকিং খাতের জন্য এই মুদ্রার মান উঁচুতে রয়েছে।
৮. মার্কিন ডলার (United States Dollar – USD)
মার্কিন ডলার বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মুদ্রা। যদিও এটি বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান মুদ্রা না, তবুও এর ব্যবহারিক গুরুত্ব বিশাল।
এই দেশগুলোর মুদ্রার মান অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি। সাধারণত তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো এবং স্থিতিশীল অর্থনৈতিক শক্তি থাকা দেশগুলোতে মুদ্রার মান শক্তিশালী থাকে। এই তালিকা পরিবর্তনশীল। বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক বাজারের পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে মুদ্রার মূল্যের ওঠানামা হয়।
কোন দেশের টাকার মান সবচেয়ে কম
বিশ্বে কিছু দেশের মুদ্রার মান তুলনামূলকভাবে খুবই কম, যা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা, মুদ্রাস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করে। নিচে কিছু দেশের মুদ্রার তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলোর মান বর্তমানে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম:
১. ইরানি রিয়াল (Iranian Rial – IRR)
বিশ্বের সবচেয়ে কম মুদ্রা মান: ইরানের রিয়ালের মান বিশ্বের সবচেয়ে কম। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে ইরানের মুদ্রা ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়েছে।
২. ভিয়েতনামি ডং (Vietnamese Dong – VND)
ভিয়েতনামের মুদ্রা ডংয়ের মান আন্তর্জাতিক বাজারে খুবই কম। যদিও ভিয়েতনামের অর্থনীতি উন্নতি করছে, তবে ডংয়ের মান এখনো দুর্বল রয়ে গেছে।
প্যারাগুয়ের গুয়ারানি মানের দিক থেকে তুলনামূলকভাবে নিচে রয়েছে। অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং নিম্নমানের বৈদেশিক বাণিজ্যের কারণে এই মুদ্রার মানও বেশ দুর্বল।
৮. কম্বোডিয়ান রিয়েল (Cambodian Riel – KHR)
কম্বোডিয়ার মুদ্রা রিয়েলও আন্তর্জাতিক মানের দিক থেকে অনেক কম। দেশটির অর্থনীতি উন্নত না হওয়ায় মুদ্রার মান স্থিতিশীল করতে পারছে না।
৯. উজবেকিস্তান সুম (Uzbekistani Som – UZS)
উজবেকিস্তানের মুদ্রা সুমের মানও খুবই কম। দেশটির অর্থনীতি উন্নতির পথে থাকলেও মুদ্রার মান নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।
১০. লেবানিজ পাউন্ড (Lebanese Pound – LBP)
লেবাননের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের মুদ্রা লেবানিজ পাউন্ডের মান দ্রুতগতিতে পড়ে যাচ্ছে, যার ফলে এটি বিশ্বের অন্যতম দুর্বল মুদ্রা হয়ে উঠেছে।
উপরের তালিকায় উল্লেখিত দেশগুলোর মুদ্রার মান বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। সাধারণত অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এইসব দেশের মুদ্রার মান দুর্বল হওয়ার মূল কারণ।
বাংলাদেশের টাকার মান কোন দেশে বেশি
বাংলাদেশি টাকার (BDT) মান বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে, যা মূলত সেই দেশের মুদ্রার মানের ওপর নির্ভর করে। নিচে কিছু দেশের নাম দেওয়া হলো, যেখানে বাংলাদেশি টাকার মান তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে:
১. ভিয়েতনাম
ভিয়েতনামি ডং (VND) এর মান খুবই কম, ফলে বাংলাদেশি টাকার মান ভিয়েতনামে তুলনামূলকভাবে বেশি।
২. ইরান
ইরানি রিয়াল (IRR) বিশ্বের অন্যতম দুর্বল মুদ্রা। বাংলাদেশের টাকা ইরানে তুলনামূলকভাবে বেশি মূল্যবান।
৩. ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়া (IDR) এর মানও কম। বাংলাদেশি টাকা ইন্দোনেশিয়ায় তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী।
৪. লাওস
লাওস কিপ (LAK) এর মানও কম। লাওসে বাংলাদেশি টাকার মান বেশি হতে পারে।
৫. কম্বোডিয়া
কম্বোডিয়ান রিয়েল (KHR) এর মানও অনেক কম। তাই কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশি টাকার মান বেশি।
৬. উজবেকিস্তান
উজবেকিস্তানের মুদ্রা সুম (UZS) অনেক দুর্বল, ফলে বাংলাদেশি টাকা সেখানে শক্তিশালী।
৭. সিয়েরা লিওন
সিয়েরা লিওনের লিয়ন (SLL) এর মান কম হওয়ায়, সেখানেও বাংলাদেশি টাকার মান তুলনামূলকভাবে বেশি।
৮. প্যারাগুয়ে
প্যারাগুয়ের গুয়ারানি (PYG) দুর্বল মুদ্রা, ফলে সেখানে বাংলাদেশি টাকা বেশি মূল্যবান।
যেসব দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেশি এবং যেসব দেশের মুদ্রার মান আন্তর্জাতিক বাজারে দুর্বল, সেইসব দেশে বাংলাদেশি টাকার মান তুলনামূলকভাবে বেশি।