বাংলাদেশে পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়া এখন আগের চেয়ে সহজ এবং সুসংগঠিত। পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র এবং ধাপ অনুসরণ করতে হয়। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, প্রক্রিয়া এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ নিয়ে।
এই পোস্টে আপনি যা যা জানতে পারবেন:
পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (২০২৪)
- অনলাইনে আবেদনকৃত ফর্মের প্রিন্ট কপি: পাসপোর্টের জন্য প্রথমেই আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার পর আপনাকে আবেদন ফর্মটি প্রিন্ট করে নিতে হবে।
- ফি জমা প্রদানের রশিদ: অনলাইনে আবেদন করার সময় আপনাকে পাসপোর্টের ফি প্রদান করতে হবে। ফি প্রদানের পর আপনি একটি রশিদ পাবেন, যেটি আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল ও ফটোকপি: আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের মূল কপি এবং এর একটি ফটোকপি আপনাকে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে।
- পূর্বের পাসপোর্ট ও এর ফটোকপি (যদি থাকে): আপনার যদি পূর্বে কোন পাসপোর্ট থাকে, তাহলে সেটির মূল কপি এবং একটি ফটোকপি আপনাকে জমা দিতে হবে।
- ১৮ (আঠার) বছরের নিম্নে আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে:
- অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
- পিতা-মাতার এনআইডি কার্ড
- ০৬ (ছয়) বছরের নিম্নে আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে:
- রঙ্গিন পোশাক পরিহিত পাসপোর্ট সাইজের গ্রে ব্যাকগ্রাউন্ড ল্যাব প্রিন্টেড ছবি
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি (৩ কপি):
প্রয়োজনীয় মাপের (৫ X ৫ সেন্টিমিটার) ৩টি রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই সাদা হতে হবে এবং মুখমণ্ডল পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান থাকতে হবে। - পরিবারের সদস্যদের জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি:
বিশেষ করে পিতামাতা বা স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দিতে হতে পারে।
পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া
১. অনলাইন ফর্ম পূরণ:
পাসপোর্ট আবেদন ফর্মটি প্রথমে অনলাইনে পূরণ করতে হবে। আপনি এই লিংক থেকে সরাসরি অনলাইন আবেদন করতে পারেন। আবেদন ফর্মটি নির্ভুলভাবে পূরণ করার সময়, আপনার তথ্য যথাযথভাবে প্রদান করা জরুরি।
২. ফি জমা করা:
অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণের পর আবেদন ফি জমা দিতে হবে। ফি জমা দেয়ার পর, রশিদ সংরক্ষণ করে রাখতে হবে যা পরে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে।
৩. বায়োমেট্রিক ডেটা প্রদান:
আবেদন ফর্ম জমা দেয়ার পর, আপনাকে নির্ধারিত পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আপনার বায়োমেট্রিক ডেটা (ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ছবি, এবং সিগনেচার) দিতে হবে। এটি করতে গেলে অবশ্যই সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
৪. পুলিশ ভেরিফিকেশন:
বায়োমেট্রিক ডেটা দেয়ার পর আপনার আবেদন পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য পাঠানো হবে। পুলিশ আপনার দেয়া তথ্য যাচাই করে একটি রিপোর্ট প্রদান করবে। ভেরিফিকেশন পদ্ধতি স্বাভাবিকভাবে ৭-১০ দিন সময় নেয়।
৫. পাসপোর্ট সংগ্রহ:
পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর পাসপোর্ট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। পাসপোর্ট তৈরি হলে আপনার মোবাইলে একটি নোটিফিকেশন পাঠানো হবে, যেখানে পাসপোর্ট সংগ্রহের তারিখ ও সময় জানিয়ে দেয়া হবে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২৪
পাসপোর্ট আবেদনের সময়সীমা এবং ফি (২০২৪)
ই-পাসপোর্ট বা মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের ক্ষেত্রে আবেদনের সময়সীমা ও ফি নির্ভর করে কোন ধরনের পাসপোর্ট আপনি করতে চান তার উপর। সাধারণত তিন ধরণের সেবা পাওয়া যায়:
- নিয়মিত:
৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায়। ফি: ৩,৪৫০ টাকা (৫ বছরের মেয়াদ) এবং ৫,৭৫০ টাকা (১০ বছরের মেয়াদ)। - জরুরী:
৭-১০ কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায়। ফি: ৫,৭৫০ টাকা (৫ বছরের মেয়াদ) এবং ৯,২০০ টাকা (১০ বছরের মেয়াদ)। - অত্যন্ত জরুরী:
৩-৫ কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায়। ফি: ১০,৫০০ টাকা (৫ বছরের মেয়াদ) এবং ১৩,৮০০ টাকা (১০ বছরের মেয়াদ)।
আরো জানুন: পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে ২০২৪
পাসপোর্ট আবেদন করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
- সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন, কারণ ভুল তথ্য প্রদান করলে পাসপোর্ট প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে।
- পাসপোর্ট আবেদন ফি নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দেয়ার পর রশিদটি সংরক্ষণ করুন।
- পাসপোর্ট করতে আগেই জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে নেয়া ভালো।
- পুলিশের ভেরিফিকেশনের জন্য সকল তথ্য প্রস্তুত রাখুন এবং অনুকূল যোগাযোগ রাখুন।
উপসংহার
আশা করি passport korte ki ki lage সেই সম্পর্কে একটি বাস্তব ধারণা পেয়েছেন। পাসপোর্ট তৈরি করতে সময়মত এবং সঠিক কাগজপত্র জমা দেয়া জরুরি। সঠিক নিয়ম মেনে পাসপোর্ট করার মাধ্যমে আপনি দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণে প্রয়োজনীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি হাতে পাবেন।
এছাড়াও, পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ই-পাসপোর্ট ওয়েবসাইট পরিদর্শন করতে পারেন।
আপনি যদি আরো কোন প্রশ্ন বা বিস্তারিত তথ্য জানতে চান, তাহলে আমাদের কমেন্ট সেকশনে জানান।