ইউরোপের সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা

সেনজেন অঞ্চল হল ইউরোপের একটি অঞ্চল যেখানে দেশগুলির মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা নিয়ন্ত্রণ প্রায় বিলুপ্ত। অর্থাৎ, একবার আপনি যদি সেনজেন অঞ্চলের একটি দেশে প্রবেশ করেন, তাহলে আপনি অন্য দেশগুলিতেও স্বাধীনভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন।

সেনজেন চুক্তি কী?

সেনজেন চুক্তি হলো ইউরোপের একটি বিশেষ চুক্তি যা ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং এই দেশগুলোর মধ্যে স্বাধীনভাবে ভ্রমণের সুযোগ দেয়। এই চুক্তির আওতায় সেনজেন ভিসা দিয়ে যে কোনো ব্যক্তি একটি সেনজেন দেশের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে এবং চুক্তিভুক্ত অন্যান্য দেশে অবাধে ভ্রমণ করতে পারে।

সেনজেন চুক্তি ১৯৮৫ সালে লুক্সেমবার্গের সেনজেন নামক গ্রামে স্বাক্ষরিত হয়, তাই এটি “সেনজেন চুক্তি” নামে পরিচিত। বর্তমানে এই চুক্তির আওতায় ২৭টি দেশ রয়েছে। তবে, এই ২৭টি দেশই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য নয়, বরং কিছু দেশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাইরে থেকেও এই চুক্তির অংশ হয়েছে।

সেনজেন ভুক্ত দেশসমূহের তালিকা:

  1. অস্ট্রিয়া
  2. বেলজিয়াম
  3. চেক প্রজাতন্ত্র
  4. ডেনমার্ক
  5. এস্তোনিয়া
  6. ফিনল্যান্ড
  7. ফ্রান্স
  8. জার্মানি
  9. গ্রিস
  10. হাঙ্গেরি
  11. আইসল্যান্ড
  12. ইতালি
  13. লাটভিয়া
  14. লিথুয়ানিয়া
  15. লুক্সেমবার্গ
  16. মাল্টা
  17. নেদারল্যান্ডস
  18. নরওয়ে
  19. পোল্যান্ড
  20. পর্তুগাল
  21. স্লোভাকিয়া
  22. স্লোভেনিয়া
  23. স্পেন
  24. সুইডেন
  25. সুইজারল্যান্ড
  26. লিচেনস্টেইন
  27. ক্রোয়েশিয়া (সর্বশেষ যুক্ত হওয়া দেশ, ২০২৩ সালে)

সেনজেন দেশের সুবিধা কি:

সেনজেন দেশের সুবিধাগুলো বেশ ব্যাপক এবং বহুমুখী। নিচে কিছু প্রধান সুবিধা তুলে ধরা হলো:

নাগরিকদের জন্য:

  • অবাধ চলাচল: সেনজেন অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো নাগরিকরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়াই যেকোনো সময় যেকোনো কারণে ভ্রমণ করতে পারেন। এটি ব্যবসা, চাকরি, শিক্ষা, চিকিৎসা, এমনকি পর্যটনের জন্যও প্রযোজ্য।
  • কাজের সুযোগ: সেনজেন অঞ্চলের যেকোনো দেশে নাগরিকরা সহজেই কাজ খুঁজে পেতে এবং সেখানে বসবাস করতে পারেন।
  • শিক্ষার সুযোগ: একইভাবে, সেনজেন অঞ্চলের যেকোনো দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করা সহজ হয়।
  • স্বাস্থ্যসেবা: সেনজেন অঞ্চলের যেকোনো দেশে জরুরি চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা যায়।

দেশের জন্য:

  • বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি: সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ না থাকায় দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি পায়। এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে।
  • পর্যটন খাতের সমৃদ্ধি: সহজ ভ্রমণ ব্যবস্থার ফলে পর্যটন খাতের প্রসার ঘটে। এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখে।
  • সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান: বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ঘটে। এটি সহনশীলতা ও বোঝাপড়া বাড়ায়।
  • সহযোগিতা ও নিরাপত্তা: সেনজেন দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ায়, বিশেষ করে অপরাধ দমন ও সন্ত্রাস প্রতিরোধের ক্ষেত্রে।

শেনজেন অঞ্চলের চ্যালেঞ্জসমূহ:

সুবিধা থাকলেও শেনজেন অঞ্চলের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে, যেমন:

  • অপরাধ ও সন্ত্রাস: সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
  • অবৈধ অভিবাসন: অবৈধ অভিবাসীরা সহজেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে প্রবেশ করতে পারে।
  • সুরক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয়: সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সুরক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয় সাধন একটি চ্যালেঞ্জ।

সেনজেন ভিসা এবং এর গুরুত্ব:

সেনজেন ভিসা হলো ইউরোপের সেনজেন এলাকা ভ্রমণের জন্য একটি একক ভিসা যা চুক্তিভুক্ত দেশগুলোতে প্রবেশের অনুমতি দেয়। এই ভিসার মাধ্যমে আপনি কোনো এক দেশে প্রবেশ করে অন্যান্য সেনজেন দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন, যা ইউরোপ ভ্রমণের জন্য একটি বড় সুবিধা।

আরো পড়ুন: বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের কোন কোন দেশে যাওয়া যায়

শেষ কথা:

সামগ্রিকভাবে শেনজেন অঞ্চল ইউরোপের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে এর সুফল পাওয়ার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সদস্য দেশগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। ভবিষ্যতে আরও কিছু দেশ এই অঞ্চলে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ইউরোপের সংহতি ও সহযোগিতাকে আরও জোরদার করবে।

Leave a Comment