আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা, যাওয়ার উপায় ও খরচ 2024
আমেরিকায় ভ্রমণ, পড়াশোনা, কাজ, বা স্থায়ী বসবাসের জন্য যেকোনো ব্যক্তি বা প্রার্থীকে একটি বৈধ ভিসার প্রয়োজন হয়। আমেরিকান ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া সাধারণত জটিল হতে পারে, তবে সঠিকভাবে নিয়ম মেনে চললে এবং প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করলে এটি সহজতর হতে পারে। এখানে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব কী কী যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ করতে হয় আমেরিকার ভিসা পাওয়ার জন্য।
এই পোস্টে আপনি যা যা জানতে পারবেন:
আমেরিকার ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা
ভ্রমণের স্পষ্ট উদ্দেশ্য: ভিসা আবেদনের সময় আপনাকে আপনার ভ্রমণের স্পষ্ট উদ্দেশ্য উল্লেখ করতে হবে, যেমন ব্যবসা, শিক্ষা, পর্যটন, বা চিকিৎসা।
বৈধ পাসপোর্ট: আপনার পাসপোর্ট অবশ্যই বৈধ হতে হবে এবং ভিসার মেয়াদের তুলনায় অন্তত ৬ মাস বেশি মেয়াদ থাকতে হবে।
DS-160 ফর্ম পূরণ: আপনাকে অনলাইনে DS-160 ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
ভিসা ফি প্রদান: আপনাকে নির্ধারিত ভিসা ফি জমা দিতে হবে।
আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ: আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনার আমেরিকায় থাকার সময় যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে। এর জন্য আপনি ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ট্যাক্স রিটার্ন, বা অন্যান্য আর্থিক প্রমাণ জমা দিতে পারেন।
স্থায়ী আবাসনের প্রমাণ: আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনার দেশে ফিরে আসার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, যেমন চাকরি, পরিবার, বা সম্পত্তি।
ক্লিন ইমিগ্রেশন রেকর্ড: আপনার পূর্বে কোনো অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করা উচিত নয়।
ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া: আপনাকে ভিসা ইন্টারভিউয়ের সময় কনস্যুলার অফিসারকে সন্তুষ্ট করতে হবে যে আপনি ভিসার যোগ্য এবং আপনি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দেশে ফিরে আসবেন।
স্বাস্থ্যগত অবস্থা: কিছু ক্ষেত্রে, আপনাকে আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রমাণ জমা দিতে হতে পারে।
এই বিষয়গুলো ছাড়াও, আপনাকে অবশ্যই সত্য এবং সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে এবং কোনো প্রতারণামূলক কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও তথ্যের জন্য, আপনি মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন।
বিভিন্ন ভিসা ক্যাটাগরির আমেরিকার ভিসা জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতা
১. পর্যটন বা অস্থায়ী ভিসা (B1/B2)
সফরের উদ্দেশ্য: আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য হতে হবে পর্যটন, চিকিৎসা, ব্যবসায়িক সফর বা বন্ধুবান্ধব পরিদর্শন।
ফেরত যাওয়ার প্রমাণ: আপনি প্রমাণ করতে হবে যে সফরের পর আপনি নিজ দেশে ফিরে যাবেন। এর জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্ট, চাকরি বা ব্যবসার তথ্য জমা দিতে হয়।
আর্থিক সক্ষমতা: ভ্রমণের সমস্ত খরচ বহন করার জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সম্পদের প্রমাণ দিতে হবে।
২. শিক্ষা ভিসা (F-1 বা M-1)
প্রবেশাধিকার: আপনাকে আমেরিকার কোনো অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তি হওয়ার প্রমাণ থাকতে হবে।
আর্থিক সহায়তা: শিক্ষাকালীন সময় নিজের খরচ বহনের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তার প্রমাণ দিতে হবে।
আবাসন: ভিসা মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আপনি নিজ দেশে ফিরে যাবেন তার প্রমাণ দেখাতে হবে।
৩. কাজের ভিসা (H1B, L1, O1)
নিয়োগপত্র: আমেরিকার কোনো প্রতিষ্ঠানের থেকে বৈধ নিয়োগপত্র থাকতে হবে।
যোগ্যতা: আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং দক্ষতা সংশ্লিষ্ট পেশায় কাজ করার উপযুক্ত হতে হবে।
প্রকল্প ও অবস্থান: ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আপনি নিজ দেশে ফিরে যাবেন এমন ইচ্ছা প্রকাশ করা।
৪. অভিবাসী ভিসা (Green Card)
স্পন্সরশিপ: আপনি পরিবার বা চাকরির মাধ্যমে স্পন্সর হওয়া আবশ্যক।
বৈধতা: আপনি আমেরিকার অভিবাসন নীতির সকল নিয়ম মেনে বৈধভাবে আবেদন করতে হবে।
৫. যথাযথ নথিপত্র ও সাক্ষাৎকার
নির্ধারিত নথিপত্র এবং সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আপনার ভিসা আবেদনের সত্যতা যাচাই করা হবে।
এই শর্তগুলো ছাড়াও, বিভিন্ন ধরনের ভিসার জন্য নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে। ভিসার ধরন অনুযায়ী মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইট থেকে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে খরচ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমন যাত্রার উদ্দেশ্য, ভিসার ধরন, ফ্লাইটের ধরন, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যবীমা, ইত্যাদি। এখানে সাধারণ খরচের একটি ধারণা দেয়া হলো:
১. ভিসার খরচ
B1/B2 (পর্যটন/ব্যবসা) ভিসা ফি: প্রায় ১৮০ মার্কিন ডলার (প্রায় ২০,০০০ টাকা)।
F1 (শিক্ষার্থী) ভিসা ফি: ১৬০ মার্কিন ডলার (প্রায় ১৮,০০০ টাকা)।
SEVIS ফি (শিক্ষার্থী ভিসার জন্য): প্রায় ৩৫০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৪০,০০০ টাকা)।
H1B (কর্মসংস্থান) ভিসা ফি: প্রায় ১৯০ মার্কিন ডলার (প্রায় ২১,০০০ টাকা)।
২. ফ্লাইটের খরচ
ঢাকা থেকে আমেরিকা (নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস ইত্যাদি): ফ্লাইটের সময় এবং বুকিংয়ের উপর নির্ভর করে সাধারণত ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে খরচ হয়।
সস্তা অফার পেলে খরচ কম হতে পারে, আবার সময়ের উপর ভিত্তি করে বেশি খরচও হতে পারে।
৩. স্বাস্থ্যবীমা
স্বাস্থ্যবীমা নেওয়া অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী ভিসার জন্য। এর খরচ সাধারণত ১০০ থেকে ৫০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ১০,০০০ – ৫০,০০০ টাকা) হতে পারে।
৪. থাকা-খাওয়ার খরচ
ছোট সফর: এক সপ্তাহের সফরের জন্য প্রায় ১,০০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টাকা থাকতে পারে।
শিক্ষার্থী বা দীর্ঘমেয়াদী থাকা: প্রাথমিকভাবে ৫-১০ লাখ টাকা খরচ ধরা যেতে পারে প্রথম ছয় মাস থেকে এক বছরের জন্য।
৫. অন্যান্য খরচ
যাতায়াত, ভ্রমণ বীমা, এবং জরুরি খরচ: প্রায় ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা অতিরিক্ত থাকতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যাওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে, যা আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য, সময়কাল, এবং ব্যক্তিগত পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। এখানে কয়েকটি সাধারণ উপায় উল্লেখ করা হলো:
১. পর্যটক ভিসা (B1/B2 ভিসা)
উদ্দেশ্য: ব্যবসা, পর্যটন, চিকিৎসা সেবা বা বন্ধু-পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ।
কীভাবে আবেদন করবেন:
DS-160 ফর্ম পূরণ করে অনলাইনে আবেদন জমা দিতে হবে।
ভিসা ফি জমা দিতে হবে।
ইন্টারভিউ এর জন্য ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে সাক্ষাৎ করতে হবে।
প্রয়োজনীয় নথি:
বৈধ পাসপোর্ট।
DS-160 কনফার্মেশন পৃষ্ঠা।
আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ।
দেশে ফেরার প্রতিশ্রুতি এবং সামাজিক সংযোগের প্রমাণ।
আমেরিকায় থাকার সময়ের খরচ বহনের প্রমাণ।
২. শিক্ষার্থী ভিসা (F1/M1 ভিসা)
উদ্দেশ্য: আমেরিকান স্কুল, কলেজ, বা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ।
কীভাবে আবেদন করবেন:
প্রথমে একটি আমেরিকান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হবে এবং I-20 ফর্ম পেতে হবে।
SEVIS ফি (শিক্ষার্থী ভিসার জন্য নিবন্ধন ফি) এবং DS-160 ফর্ম পূরণ করতে হবে।
ভিসা ইন্টারভিউয়ের জন্য মার্কিন দূতাবাসে সাক্ষাৎ করতে হবে।
প্রয়োজনীয় নথি:
ভর্তির চিঠি ও I-20 ফর্ম।
আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ (টিউশন ফি এবং খরচ সামলানোর সক্ষমতা)।
শিক্ষাগত নথি ও পরীক্ষা ফলাফল (যেমন TOEFL, IELTS)।
৩. কর্মসংস্থান ভিসা (H1B ভিসা)
উদ্দেশ্য: যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ যোগ্যতার ভিত্তিতে কোনো কোম্পানিতে কাজ করা।
কীভাবে আবেদন করবেন:
প্রথমে একটি মার্কিন কোম্পানির কাছ থেকে জব অফার পেতে হবে।
সেই কোম্পানি আপনার পক্ষ থেকে H1B পিটিশন দাখিল করবে।
পিটিশন অনুমোদনের পর, আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
প্রয়োজনীয় নথি:
কর্মসংস্থানের প্রমাণপত্র।
DS-160 ফর্ম এবং ভিসা ফি পরিশোধের প্রমাণ।
শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পেশাগত অভিজ্ঞতার নথি।
৪. গ্রিন কার্ড লটারি (ডিভি লটারি)
উদ্দেশ্য: যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পাওয়া।
কীভাবে আবেদন করবেন:
প্রতি বছর অক্টোবর মাসে ডিভি লটারি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা বিনামূল্যে আবেদন করতে পারে।
আবেদন করতে হলে অনলাইনে নির্দিষ্ট সময়ে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হয়।
লটারি জিতলে আপনি গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
প্রয়োজনীয় নথি:
আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা জমা দিতে হবে।
৫. পারিবারিক ভিসা
উদ্দেশ্য: যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বাসিন্দা বা নাগরিকের পরিবার, তারা আমেরিকায় যোগ দিতে পারেন।
কীভাবে আবেদন করবেন:
আপনার মার্কিন পরিবার আপনাকে পিটিশন করবে।
পিটিশন অনুমোদনের পর, আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
প্রয়োজনীয় নথি:
পারিবারিক সম্পর্কের প্রমাণ।
মার্কিন পৃষ্ঠপোষকের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রমাণ।
৬. ব্যবসায়িক ভিসা (E2 ভিসা)
উদ্দেশ্য: যারা যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করতে চান বা ব্যবসা পরিচালনা করতে চান।
কীভাবে আবেদন করবেন:
একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি ব্যবসা স্থাপন বা চালানোর পরিকল্পনা থাকতে হবে।
প্রয়োজনীয় নথি:
বিনিয়োগ এবং ব্যবসার প্রমাণ।
DS-160 ফর্ম এবং ভিসা ফি।
৭. স্বল্পমেয়াদী কর্মসংস্থান (J1 ভিসা)
উদ্দেশ্য: বিনিময় প্রোগ্রাম বা স্বল্পমেয়াদী কর্মসংস্থানের জন্য।
কীভাবে আবেদন করবেন:
আমেরিকান স্বাগতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অফার পেতে হবে।
বিনিময় প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের প্রমাণ থাকতে হবে।
প্রয়োজনীয় নথি:
আমন্ত্রণপত্র এবং DS-2019 ফর্ম।
কর্মসংস্থান বা প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের প্রমাণ।
এই উপায়গুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যাওয়া সম্ভব। আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করার আগে, আপনার উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজনীয় নথি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
ভিসা প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে এবং প্রয়োজনীয়তা পরিবর্তিত হতে পারে। আপনার আবেদন করার আগে সর্বশেষ তথ্যের জন্য আপনার স্থানীয় মার্কিন দূতাবাস বা কনস্যুলেটের সাথে যোগাযোগ করা গুরুত্বপূর্ণ।
এই তথ্যটি শুধুমাত্র তথ্যগত উদ্দেশ্যে এবং আইনি পরামর্শ হিসাবে বিবেচিত করা উচিত নয়।