গণমাধ্যমের সুবিধা ও অসুবিধা

আধুনিক সমাজে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্র, সাময়িকী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম – এসবের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা গণমাধ্যম আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। তথ্য আদান-প্রদান, বিনোদন, শিক্ষা, এমনকি রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনেও গণমাধ্যমের ভূমिका অপরিহার্য। কিন্তু এই শক্তিশালী মাধ্যমটির রয়েছে কিছু অসুবিধাও। চলুন, গণমাধ্যমের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

এই পোস্টে আপনি যা যা জানতে পারবেন:

গণমাধ্যমের সুবিধা:

  • তথ্যের প্রাপ্যতা: গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের সর্বশেষ খবরাখবর, ঘটনা-দুর্ঘটনা, তথ্য ও উপাত্ত সহজেই জানা যায়। এটি আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে এবং বিশ্ব সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করে।
  • বিনোদন ও শিক্ষা: গণমাধ্যম বিনোদনের অন্যতম প্রধান উৎস। সিনেমা, নাটক, গান, খেলাধুলা – এসবের মাধ্যমে আমরা বিনোদন পাই। একই সাথে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, তথ্যচিত্র, বই পর্যালোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে গণমাধ্যম আমাদের শিক্ষিত করে তোলে।
  • সামাজিক সচেতনতা: গণমাধ্যম বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা, যেমন দারিদ্র্য, অপরাধ, দুর্নীতি, নারীর প্রতি সহিংসতা ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে। এটি সামাজিক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে।
  • জনমত গঠন: গণমাধ্যম বিভিন্ন বিষয়ে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সরকার ও নীতিনির্ধারকদের জনগণের মতামত জানতে সাহায্য করে।
  • গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ: গণমাধ্যমকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। এটি সরকারের কাজকর্মের ওপর নজরদারি করে এবং জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।

গণমাধ্যমের অসুবিধা:

  • মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ: অনেক সময় গণমাধ্যমে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, অতিরঞ্জিত বা পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ প্রকাশিত হয়। এটি জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারে এবং সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
  • হলুদ সাংবাদিকতা: কিছু গণমাধ্যম সংবাদকে অতিরঞ্জিত করে, ব্যক্তিগত আক্রমণ করে, এবং স্ক্যান্ডাল তৈরি করে জনপ্রিয়তা অর্জনের চেষ্টা করে। এটি সাংবাদিকতার নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী।
  • সহিংসতা ও অশ্লীলতা: গণমাধ্যমে প্রচারিত সহিংসতা ও অশ্লীলতা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
  • বাণিজ্যিকীকরণ: অনেক গণমাধ্যম বাণিজ্যিক স্বার্থে পরিচালিত হয়। ফলে তারা জনগণের স্বার্থের চেয়ে বিজ্ঞাপনদাতাদের স্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দেয়।
  • আসক্তি: গণমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার আসক্তির সৃষ্টি করতে পারে। এটি মানুষকে বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে এবং সামাজিক সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে।

সচেতনতা ও সমাধান:

গণমাধ্যমের সুবিধা যেমন অনেক, তেমনি এর অসুবিধাও কম নয়। সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো গণমাধ্যমের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। আমাদের উচিত নির্ভরযোগ্য ও নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যম অনুসরণ করা, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রত্যাখ্যান করা, এবং গণমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকা।

সরকার, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক সংগঠন, এবং সুশীল সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। এতে করে গণমাধ্যম সত্যিকার অর্থেই জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পারবে এবং সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারবে।

Leave a Comment