জানুন আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে

আমাদের চারপাশে বিদ্যমান আলো আমাদের চোখকে বিভিন্ন দৃশ্য দেখায়। আলোর এই অসাধারণ ক্ষমতার পেছনে লুকিয়ে আছে বিজ্ঞানের এক রহস্যময় প্রক্রিয়া, যা আমরা আলোর প্রতিসরণ নামে জানি। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আলো একটি মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে প্রবেশ করার সময় তার গতিপথ পরিবর্তন করে।

আলোর প্রতিসরণ কি?

ধরা যাক, একটি আলোর রশ্মি বায়ু থেকে পানিতে প্রবেশ করছে। পানিতে প্রবেশের পর আলোর রশ্মি তার গতিপথ পরিবর্তন করে এবং বায়ুর তুলনায় পানির মধ্য দিয়ে সামান্য বেঁকে যায়। এই ঘটনাকেই আমরা আলোর প্রতিসরণ বলি।

আলোর প্রতিসরণের নিয়ম:

আলোর প্রতিসরণের নিয়ম দুটি সহজ নীতির উপর নির্ভর করে:

  1. আপতন কোণ এবং প্রতিসরণ কোণের অনুপাত একটি ধ্রুবক: আপতন কোণ হলো আলোর রশ্মি যখন একটি মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে প্রবেশ করে তখন রশ্মিটির সাথে প্রথম মাধ্যমের সীমানা তলের সমকোণ, এবং প্রতিসরণ কোণ হলো রশ্মিটি দ্বিতীয় মাধ্যমের মধ্য দিয়ে গমন করার সময় সীমানা তলের সাথে সমকোণ। এই নিয়ম অনুসারে, আপতন কোণ (i) এবং প্রতিসরণ কোণ (r) এর অনুপাত একটি ধ্রুবক (n) যা দুটি মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক নামে পরিচিত।

n = sin(r) / sin(i)

  1. আপতন রশ্মি, প্রতিসরিত রশ্মি এবং সীমানা তল, এই তিনটি রশ্মি একই বিন্দুতে মিলিত হয়: এই নিয়ম অনুসারে, যখন আলোর রশ্মি একটি মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে প্রবেশ করে, তখন আপতন রশ্মি, প্রতিসরিত রশ্মি এবং সীমানা তল, এই তিনটি রশ্মি একই বিন্দুতে মিলিত হয়। এই বিন্দুটিকে আপতন বিন্দু বলা হয়।

আলোর প্রতিসরণের প্রয়োগ:

আলোর প্রতিসরণের বাস্তব জীবনে বিভিন্ন প্রয়োগ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রয়োগ হলো:

  • প্রিজম: প্রিজম হলো ত্রিভুজাকৃতির কাচের টুকরো যা আলোর প্রতিসরণের নীতি ব্যবহার করে সাদা আলোকে রঙিন আলোতে বিভক্ত করে।
  • টেলিস্কোপ: টেলিস্কোপে বড় আকারের লেন্স ব্যবহার করা হয় যা আলোর প্রতিসরণের নীতি ব্যবহার করে দূরবর্তী বস্তুকে আরও স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করে।
  • মাইক্রোস্কোপ: মাইক্রোস্কোপেও লেন্স ব্যবহার করা হয় যা আলোর প্রতিসরণের নীতি ব্যবহার করে অতিক্ষুদ্র বস্তুকে বড় করে দেখতে সাহায্য করে।
  • ছদ্মবেশ: জলে ডুবে থাকা বস্তুকে তার আসল অবস্থানের চেয়ে উপরে দেখায়। কারণ, আলো জল থেকে বায়ুতে প্রতিসরণ করার সময় তার গতিপথ পরিবর্তন করে।

আলোর প্রতিসরণের আরও কিছু উল্লেখযোগ্য প্রয়োগ:

  • আলোকীয় তন্তু: আলোকীয় তন্তুতে আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের নীতি ব্যবহার করে দীর্ঘ দূরত্বে তথ্য প্রেরণ করা হয়।
  • মিরর: মিরর তৈরিতে আলোর প্রতিফলন এবং প্রতিসরণের নীতি ব্যবহার করা হয়।
  • রত্নপাথর: রত্নপাথরের উজ্জ্বলতা এবং রঙের বৈচিত্র্য আলোর প্রতিসরণের কারণে হয়।
  • জলপ্রপাত: জলপ্রপাতের নিচে যে রঙিন সৌন্দর্য দেখা যায় তা আলোর প্রতিসরণের কারণে হয়।

উপসংহার:

আলোর প্রতিসরণ বিজ্ঞানের একটি মৌলিক ধারণা যার বাস্তব জীবনে বিস্তৃত প্রয়োগ রয়েছে। আলোর এই অসাধারণ ক্ষমতা আমাদের চারপাশের বিশ্বকে আরও রহস্যময় ও আকর্ষণীয় করে তোলে।

দ্রষ্টব্য:

এই প্রবন্ধটিতে আলোর প্রতিসরণ সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আরও বিস্তারিত জানার জন্য আপনি পদার্থবিজ্ঞানের যেকোনো ভালো বই বা ওয়েবসাইট পরীক্ষা করতে পারেন।

Leave a Comment