দলিল দস্তাবেজ নির্ভর গবেষণা পদ্ধতি বলতে কী বোঝায়

দলিল দস্তাবেজ নির্ভর গবেষণা পদ্ধতি হলো এমন একটি গবেষণা পদ্ধতি যেখানে বিদ্যমান লিখিত তথ্য, যেমন নথিপত্র, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, সাহিত্যকর্ম, এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক উৎস, গবেষণার প্রাথমিক তথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে গবেষকরা তথ্য বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা এবং মূল্যায়ন করে গবেষণার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করেন।

দলিল দস্তাবেজ নির্ভর গবেষণা পদ্ধতির ধাপসমূহ

  1. গবেষণার প্রশ্ন নির্ধারণ: প্রথমে গবেষককে গবেষণার প্রশ্ন স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে।
  2. তথ্য সংগ্রহ: পরবর্তীতে, গবেষককে প্রশ্নের সাথে প্রাসঙ্গিক লিখিত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
  3. তথ্য সমালোচনা: সংগৃহীত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা, সত্যতা এবং প্রাসঙ্গিকতা যাচাই করতে হবে।
  4. তথ্য বিশ্লেষণ: সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষক প্রশ্নের উত্তরের সূত্র খুঁজে বের করবেন।
  5. উপসংহার: শেষ পর্যন্ত, গবেষক তথ্য বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে গবেষণার প্রশ্নের উত্তর এবং উপসংহার টেনে লিখবেন।

দলিল দস্তাবেজ নির্ভর গবেষণা পদ্ধতির সুবিধা

  • ব্যাপক তথ্য: ঐতিহাসিক ঘটনা, সমাজ, সংস্কৃতি, এবং ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়।
  • সময়োপযোগী তথ্য: অতীতের ঘটনা সম্পর্কে সরাসরি তথ্য পাওয়া যায়।
  • পুনরায় পরীক্ষা: সংগৃহীত তথ্য অন্য গবেষকদের দ্বারা পুনরায় পরীক্ষা করা যায়।
  • খরচ কম: অন্যান্য গবেষণা পদ্ধতির তুলনায় তুলনামূলক কম খরচে গবেষণা করা যায়।

দলিল দস্তাবেজ নির্ভর গবেষণা পদ্ধতির অসুবিধা

  • তথ্যের প্রাপ্যতা: প্রয়োজনীয় তথ্য সবসময় পাওয়া যায় না।
  • তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা: তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা এবং সত্যতা যাচাই করা কঠিন হতে পারে।
  • ব্যাখ্যার পক্ষপাত: গবেষকের পক্ষপাত তথ্যের ব্যাখ্যাকে প্রভাবিত করতে পারে।
  • সময়সাপেক্ষ: তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যা করতে অনেক সময় লাগতে পারে।

উদাহরণ:

  • ইতিহাস: ঐতিহাসিক ঘটনা, ব্যক্তি, এবং সমাজ সম্পর্কে গবেষণা করতে দলিল দস্তাবেজ নির্ভর গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
  • সাহিত্য: সাহিত্যকর্ম বিশ্লেষণ করতে এবং লেখকের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

আইন:

  • বাংলাদেশের সংবিধান: বাংলাদেশের সংবিধানের ধারা ও অনুচ্ছেদ বিশ্লেষণ করে আইনি নীতি ও নিয়মাবলী সম্পর্কে জানা হয়।
  • আন্তর্জাতিক আইন: আন্তর্জাতিক আইনের বিভিন্ন নীতি ও নিয়মাবলী সম্পর্কে জানতে আন্তর্জাতিক আইনি নথিপত্র বিশ্লেষণ করা হয়।

বিজ্ঞান:

  • প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞান: প্রাচীন ভারতীয়দের জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে প্রাচীন ভারতীয় বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ বিশ্লেষণ করা হয়।
  • আধুনিক বিজ্ঞানের ইতিহাস: আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রবন্ধ ও বই বিশ্লেষণ করা হয়।

অন্যান্য:

  • ধর্মীয় গ্রন্থ: বিভিন্ন ধর্মের ধর্মগ্রন্থ বিশ্লেষণ করে ধর্মীয় বিশ্বাস, নীতি, এবং আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানা হয়।
  • মানববিজ্ঞান: বিভিন্ন সমাজের সংস্কৃতি, রীতিনীতি, এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে মানববিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রবন্ধ ও বই বিশ্লেষণ করা হয়।

দ্রষ্টব্য:

উদাহরণগুলি কেবলমাত্র দলিল দস্তাবেজ নির্ভর গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষণা করা যেতে পারে এমন বিভিন্ন বিষয়ের একটি ধারণা দেয়।

আরও অনেক বিষয় আছে যেখানে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। গবেষকদের নিজ নিজ আগ্রহ ও গবেষণার প্রশ্ন অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করতে হবে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা উচিত:

  • গবেষণার প্রশ্ন স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা: গবেষণা শুরু করার আগে গবেষককে অবশ্যই গবেষণার প্রশ্ন স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে। প্রশ্ন যত স্পষ্ট হবে, তত সহজে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা যাবে।
  • প্রাসঙ্গিক তথ্যের উৎস খুঁজে বের করা: গবেষণার প্রশ্নের সাথে প্রাসঙ্গিক তথ্যের উৎস খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য গবেষককে লাইব্রেরি, আর্কাইভ, জাদুঘর, ইন্টারনেট ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান করতে হবে।
  • তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা: সংগৃহীত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা, সত্যতা, এবং প্রাসঙ্গিকতা যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ।
  • তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করা: সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করে গবেষক প্রশ্নের উত্তরের সূত্র খুঁজে বের করবেন।
  • উপসংহার টেনে লেখা: শেষ পর্যন্ত, গবেষক তথ্য বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে গবেষণার প্রশ্নের উত্তর এবং উপসংহার টেনে লিখবেন।

দলিল দস্তাবেজ নির্ভর গবেষণা পদ্ধতি একটি কার্যকর গবেষণা পদ্ধতি যা বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

গবেষকদের এই পদ্ধতি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা এবং সাবধানতার সাথে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত।

উপসংহার

দলিল দস্তাবেজ নির্ভর গবেষণা পদ্ধতি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষকরা ঐতিহাসিক ঘটনা, সমাজ, সংস্কৃতি, এবং ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারেন।

Leave a Comment