টিন সার্টিফিকেট আবেদন | টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন 2024

টিন (Tax Identification Number) বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর হল বাংলাদেশে করদাতাদের শনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত একটি অনন্য নম্বর। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্যই টিন সার্টিফিকেট আবশ্যক যারা নির্দিষ্ট আয়ের সীমা অতিক্রম করে। টিন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা TIN) সার্টিফিকেট একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি, যা বাংলাদেশের প্রত্যেক করদাতার জন্য অপরিহার্য। এই নিবন্ধে টিন সার্টিফিকেটের আবেদন প্রক্রিয়া, এর প্রয়োজনীয়তা, এবং টিন সার্টিফিকেট পাওয়ার ধাপগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

টিন সার্টিফিকেট কি?

টিন সার্টিফিকেট হলো একটি অনন্য শনাক্তকরণ নম্বর, যা একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কর দায়িত্ব নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) কর্তৃক এটি প্রদান করা হয় এবং এটি একজন করদাতার পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

কেন টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন?

Tin certificate বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি বিভিন্ন আর্থিক ও আইনগত কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজন। টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজনীয়তা এবং টিন সার্টিফিকেট কি কাজে লাগে সেই সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো:

১. আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য:

  • টিন সার্টিফিকেট আয়কর রিটার্ন দাখিল করার জন্য বাধ্যতামূলক। যে কেউ করযোগ্য আয় অর্জন করেন, তাকে বছরে একবার আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়, যার জন্য একটি বৈধ টিন নম্বর প্রয়োজন।

২. ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য:

  • যেকোনো ব্যবসা শুরু বা পরিচালনা করতে হলে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন। ব্যবসার নিবন্ধন, বাণিজ্য লাইসেন্স, এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য টিন নম্বর অপরিহার্য।

৩. জমি বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য:

  • জমি, ফ্ল্যাট বা অন্যান্য সম্পত্তি কেনা বা বিক্রির সময় টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। যেকোনো রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় টিন নম্বর ব্যবহার করতে হয়।

৪. গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করার জন্য:

  • ব্যক্তিগত বা বাণিজ্যিক গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করার সময় টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। এটি মোটরযান রেজিস্ট্রেশন করার একটি পূর্বশর্ত।

৫. ব্যাংক লেনদেনের জন্য:

  • বড় অংকের ব্যাংক লেনদেন বা ব্যাংক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে, ১০ লাখ টাকার বেশি এফডিআর (Fixed Deposit Receipt) করতে গেলে টিন নম্বর বাধ্যতামূলক।

৬. সরকারি টেন্ডার বা চুক্তির জন্য:

  • সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার বা চুক্তিতে অংশ নিতে চাইলে টিন সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক।

৭. শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য:

  • যারা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের টিন সার্টিফিকেট থাকা প্রয়োজন। ডিএসই বা সিএসই-তে (ঢাকা বা চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ) অ্যাকাউন্ট খোলার সময় এটি দরকার হয়।

৮. ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য:

  • ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে টিন সার্টিফিকেট থাকা আবশ্যক।

৯. বৈদ্যুতিক এবং গ্যাস সংযোগের জন্য:

  • বড় স্থাপনা বা বাণিজ্যিক ভবনের জন্য বিদ্যুৎ বা গ্যাস সংযোগের আবেদন করতে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়।

১০. অভিবাসন বা বিদেশে কাজ করার জন্য:

  • অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বিদেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্টের নবায়ন বা বিভিন্ন অভিবাসন কার্যক্রমে টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হতে পারে।

১১. উচ্চমূল্যের পণ্য ক্রয়ের জন্য:

  • কিছু ক্ষেত্রে উচ্চমূল্যের পণ্য, যেমন গাড়ি বা বিলাসবহুল পণ্য ক্রয়ের সময় টিন নম্বর প্রয়োজন হয়।

টিন সার্টিফিকেট বাংলাদেশের বিভিন্ন কর, ব্যবসায়িক, এবং আর্থিক কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আয়কর প্রদানের জন্য অপরিহার্য এবং বিভিন্ন প্রকার লেনদেন ও আইনি কার্যক্রমের জন্যও প্রয়োজন।

কারা টিন সার্টিফিকেটের জন্য যোগ্য?

বাংলাদেশে টিন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা TIN) সার্টিফিকেটের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা ও শর্তাবলী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) নির্ধারণ করে। টিন সার্টিফিকেট সাধারণত বিভিন্ন করযোগ্য কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজন। নিচে তাদের তালিকা দেওয়া হলো যারা টিন সার্টিফিকেটের জন্য যোগ্য:

১. ব্যক্তিগতভাবে যোগ্য ব্যক্তি:

  • কর্মরত ব্যক্তি (চাকরিজীবী): যেসব ব্যক্তির বার্ষিক আয় করযোগ্য সীমার মধ্যে পড়ে (বর্তমানে বার্ষিক আয় ৩ লক্ষ টাকা বা তার বেশি), তাদের টিন সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
  • ব্যবসায়ী: যারা ব্যবসা পরিচালনা করেন বা ব্যবসার মাধ্যমে আয় করছেন। যেমন: দোকান মালিক, ঠিকাদার, ফ্রিল্যান্সার, ই-কমার্স উদ্যোক্তা ইত্যাদি।
  • ভূমি বা সম্পত্তির মালিক: যেসব ব্যক্তি ভূমি বা সম্পত্তি কেনা-বেচা করেন, তাদের টিন সার্টিফিকেট থাকা বাধ্যতামূলক।
  • উচ্চমূল্যের সম্পদের মালিক: যেমন: গাড়ি ক্রয়, বাড়ি নির্মাণ, এবং নির্দিষ্ট মূল্যের চেয়ে বেশি জমি বা সম্পত্তি ক্রয় করার জন্য টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
  • সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে কর্মরত ব্যক্তি: যারা সরকারি বা বেসরকারি চাকরিতে আছেন এবং তাদের বেতন করযোগ্য সীমার মধ্যে পড়ে।
  • পেশাজীবী: আইনজীবী, ডাক্তার, প্রকৌশলী, সিএ, স্থপতি, কনসালটেন্ট, এবং অন্যান্য পেশাজীবীরা যারা পেশার মাধ্যমে আয় করেন।

২. প্রতিষ্ঠানসমূহ:

  • প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি: যারা ব্যবসা পরিচালনা করে এবং করযোগ্য আয় করে। কোম্পানির নিবন্ধনের সময় টিন সার্টিফিকেট থাকা আবশ্যক।
  • পার্টনারশিপ ফার্ম: যেসব প্রতিষ্ঠান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা করে।
  • সমিতি, ক্লাব বা সংগঠন: যেসব সংগঠন বা সমিতি আয় করে, তাদের টিন সার্টিফিকেট প্রয়োজন।

৩. কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক:

  • গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করার সময়।
  • জমি বা ফ্ল্যাট কেনার সময়।
  • ব্যাংকে বড় অঙ্কের ডিপোজিট করতে হলে।
  • শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য।
  • নির্মাণ কাজের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ বা গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করার সময়।

টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই:

  • করযোগ্য আয়ের সীমার নিচে থাকা ব্যক্তিদের জন্য টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই।
  • নির্দিষ্ট কিছু পেশাজীবী বা স্বল্প আয়ের ব্যক্তিদের টিন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক নয় যদি না তারা কোনো করযোগ্য কার্যক্রমে অংশ নেন।

সাধারণত যারা বাংলাদেশে করযোগ্য আয়ের সাথে যুক্ত, তাদের জন্য টিন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি কাজের জন্যও টিন নম্বরের প্রয়োজন হয়

টিন সার্টিফিকেট আবেদন: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

টিন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা TIN) সার্টিফিকেটের জন্য অনলাইনে আবেদন করার সময় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং তথ্যের প্রয়োজন হয়। নিচে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা দেওয়া হলো:

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং তথ্য:

  • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID):
    • আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং স্ক্যান কপি।
    • যদি জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকে তবে পাসপোর্ট বা জন্মনিবন্ধন সনদ (পাসপোর্ট বা জন্ম সনদের ক্ষেত্রে) প্রয়োজন হতে পারে।
  • মোবাইল নম্বর:
    • একটি বৈধ মোবাইল নম্বর প্রয়োজন, যা দিয়ে আপনি আবেদন প্রক্রিয়া চলাকালীন OTP (One Time Password) পেতে পারেন।
  • ইমেইল ঠিকানা:
    • একটি সক্রিয় ইমেইল অ্যাড্রেস প্রয়োজন, যেটাতে টিন সার্টিফিকেট সম্পর্কিত যাবতীয় নোটিফিকেশন পাঠানো হবে।
  • ঠিকানা প্রমাণ:
    • আপনার স্থায়ী ঠিকানার সঠিক বিবরণ দিতে হবে। এতে ভোটার আইডি কার্ডে দেওয়া ঠিকানা ব্যবহার করতে পারেন।
  • ব্যক্তিগত তথ্য:
    • নাম, পিতামাতার নাম, জন্ম তারিখ ইত্যাদি সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে।
  • আয় সংক্রান্ত তথ্য:
    • আপনার পেশা এবং আয়ের উৎস সম্পর্কিত তথ্য দিতে হবে। যেমন, আপনি যদি ব্যবসায়ী হন তবে ব্যবসা সম্পর্কিত তথ্য দিতে হতে পারে, এবং চাকরিজীবী হলে চাকরির তথ্য দিতে হবে।
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্য (প্রযোজ্য হলে):
    • আপনার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলে তার বিস্তারিত তথ্য দিতে হতে পারে।
  • পাসপোর্ট (যদি বিদেশি নাগরিক হন):
    • বিদেশি নাগরিক হলে পাসপোর্টের তথ্য এবং স্ক্যান কপি জমা দিতে হবে।

অতিরিক্ত তথ্য:

  • যদি আপনার আগে থেকেই TIN নম্বর থাকে এবং সেটি আপডেট করতে চান, তাহলে উপরোক্ত কাগজপত্রের সাথে আপনার আগের TIN নম্বরের তথ্য দিতে হবে।

এগুলো হলো অনলাইনে TIN সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে প্রয়োজনীয় প্রধান কাগজপত্র এবং তথ্য। সব কাগজপত্র সঠিকভাবে স্ক্যান করে প্রস্তুত রাখলে আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত এবং সহজে সম্পন্ন হবে।

অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট আবেদন:

বাংলাদেশে অনলাইনে টিন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা TIN) সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া বেশ সহজ। আপনাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) ওয়েবসাইট ব্যবহার করে আবেদন করতে হবে। নিচে ধাপে ধাপে পুরো প্রক্রিয়াটি দেওয়া হলো:

ধাপ ১: NBR এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ

১. NBR এর টিন রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমে প্রবেশ করতে হবে।

ধাপ ২: নতুন ব্যবহারকারী হিসেবে নিবন্ধন

১. যদি আপনার কোনো TIN না থাকে, তাহলে আপনাকে প্রথমে নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

২. “নিবন্ধন” বা “Register” অপশনে ক্লিক করুন।

৩. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), পাসপোর্ট বা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রদান করতে হবে।

ধাপ ৩: আবেদন ফর্ম পূরণ

১. ফর্মে আপনার ব্যক্তিগত এবং পেশাগত তথ্য যেমন:

  • নাম
  • জন্ম তারিখ
  • জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (NID)
  • ঠিকানা
  • পেশা এবং আয়ের তথ্য

২. সঠিক তথ্য প্রদান করুন এবং যাচাই করুন যাতে কোনো ভুল না থাকে।

ধাপ ৪: প্রয়োজনীয় নথি আপলোড

১. জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট কপি, আয় সংক্রান্ত নথি ইত্যাদি আপলোড করতে হতে পারে। ২. নির্দেশনা অনুযায়ী সব নথি স্ক্যান করে আপলোড করুন।

ধাপ ৫: আবেদন জমা দিন

১. ফর্ম পূরণ এবং নথি আপলোডের পর “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করে আবেদন জমা দিন।

২. সফলভাবে আবেদন জমা হলে, আপনাকে একটি কনফার্মেশন মেসেজ দেওয়া হবে।

ধাপ ৬: টিন সার্টিফিকেট প্রাপ্তি

১. আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আপনার ইমেইলে অথবা NBR এর ওয়েবসাইট থেকে আপনার TIN সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন।

অতিরিক্ত পরামর্শ:

  • আপনি যদি ইতিমধ্যে ই টিন সার্টিফিকেট জন্য রেজিস্ট্রেশন করে থাকেন তবে আপনাকে নতুন করে আবেদন করার প্রয়োজন নেই, কেবলমাত্র লগইন করে আপনার তথ্য আপডেট করতে পারবেন।
  • সঠিক এবং বৈধ তথ্য প্রদান করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এভাবেই আপনি সহজেই টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।

আরো পড়ুন: বয়স্ক ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম

অফলাইনে টিন সার্টিফিকেট আবেদন:

অফলাইনে টিন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা TIN) সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়াটি কিছুটা ভিন্ন এবং সরাসরি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) অফিসের মাধ্যমে করতে হয়। অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনে আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ধাপগুলো নিচে দেওয়া হলো:

ধাপ ১: আবেদন ফর্ম সংগ্রহ

  • প্রথমে আপনাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) বা সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলের অফিস থেকে একটি টিন আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে।
  • সাধারণত NBR এর আঞ্চলিক কর অফিসে এই ফর্ম পাওয়া যায়, যা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়।

ধাপ ২: ফর্ম পূরণ

  • ফর্মটি পূরণের সময় আপনাকে নিচের তথ্য দিতে হবে:
    1. ব্যক্তিগত তথ্য: আপনার নাম, পিতামাতার নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর, ঠিকানা ইত্যাদি।
    2. আয়ের উৎস: আপনার আয়ের উৎস এবং পেশার বিবরণ।
    3. ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্য (প্রযোজ্য হলে): আপনার যদি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে তবে তার তথ্য প্রদান করতে হবে।
    4. স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা: স্থায়ী এবং বর্তমান ঠিকানার তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।

ধাপ ৩: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা

আবেদন ফর্মের সাথে কিছু প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হয়:

  • জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) কপি: আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিতে হবে।
  • আয়ের প্রমাণপত্র: আপনার পেশা বা ব্যবসার উপর নির্ভর করে আয় সংক্রান্ত প্রমাণপত্র, যেমন বেতন সনদ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা ব্যবসার নথি জমা দিতে হতে পারে।
  • ঠিকানা প্রমাণপত্র: আপনার স্থায়ী বা বর্তমান ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে বিদ্যুৎ বিল বা গ্যাস বিল জমা দিতে পারেন (প্রয়োজ্য হলে)।

ধাপ ৪: ফর্ম জমা দেওয়া

  • ফর্মটি পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আপনার এলাকার NBR বা আঞ্চলিক কর অফিসে জমা দিতে হবে।
  • জমা দেওয়ার পর অফিস কর্তৃপক্ষ ফর্মটি যাচাই করবে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য চেক করবে।

ধাপ ৫: টিন সার্টিফিকেট গ্রহণ

  • ফর্ম এবং নথিপত্র যাচাইয়ের পর আপনার টিন সার্টিফিকেট প্রস্তুত করা হবে।
  • এটি আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরবরাহ করা হবে, এবং আপনি সরাসরি অফিস থেকে এটি সংগ্রহ করতে পারবেন।

অফলাইনে টিন সার্টিফিকেট আবেদন করার জন্য আপনাকে ফর্ম সংগ্রহ করে সেটি পূরণ করে কর অফিসে জমা দিতে হবে। অনলাইনের তুলনায় এটি একটু সময়সাপেক্ষ হতে পারে, তবে প্রক্রিয়াটি একই রকম সহজ।

টিন সার্টিফিকেট আবেদন: ফি

বাংলাদেশে টিন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা TIN) সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে কোনো ফি প্রয়োজন হয় না। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) বিনামূল্যে এই সেবা প্রদান করে থাকে। আপনি অনলাইনে নিজে থেকেই TIN সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং এর জন্য কোনো চার্জ দিতে হবে না।

তবে, যদি আপনি কোনো পরামর্শক বা এজেন্টের মাধ্যমে আবেদন করতে চান, তারা সার্ভিস চার্জ নিতে পারে, কিন্তু NBR এর অফিসিয়াল সিস্টেমে টিন সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য সরাসরি কোনো সরকারি ফি নেই।

সুতরাং, সরাসরি অনলাইনে NBR এর ওয়েবসাইট থেকে আবেদন করলে আপনাকে কোনো খরচ করতে হবে না।

টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড

ট্যাক্সপেয়ারের টিন সার্টিফিকেট (TIN Certificate) ডাউনলোড করার প্রক্রিয়া বাংলাদেশে অনলাইনে করা সম্ভব। এটি করার জন্য কিছু সহজ ধাপ অনুসরণ করতে হবে। নিচে পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করা হলো:

টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোডের ধাপসমূহ:

১. অনলাইনে টিন সিস্টেমে প্রবেশ করুন:

  • প্রথমে আপনার ওয়েব ব্রাউজারে যান এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (NBR) অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান: https://etaxnbr.gov.bd
  • অথবা সরাসরি ই-টিন (eTIN) পোর্টালে প্রবেশ করতে পারেন: https://secure.incometax.gov.bd/TINHome

২. লগইন করুন:

  • আপনার টিন নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে হবে। যদি আপনি নতুন ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, তাহলে প্রথমে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
  • রেজিস্ট্রেশন করতে “Registration” অথবা “Sign Up” অপশনে ক্লিক করুন এবং আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য দিন।

৩. প্রোফাইলে প্রবেশ করুন:

  • লগইন করার পরে আপনি আপনার প্রোফাইলে প্রবেশ করতে পারবেন।

4. টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করুন:

  • প্রোফাইল থেকে “Download TIN Certificate” বা “টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড” অপশনটি খুঁজে বের করুন।
  • এটি সিলেক্ট করার পরে আপনার ই-টিন সার্টিফিকেট পিডিএফ (PDF) ফরম্যাটে ডাউনলোড হবে।

৫. সার্টিফিকেট প্রিন্ট করুন (যদি প্রয়োজন হয়):

  • ডাউনলোডকৃত পিডিএফ ফাইলটি খুলে সেটি প্রিন্ট করতে পারেন আপনার প্রয়োজন হলে।

যদি আপনার টিন নম্বর বা পাসওয়ার্ড ভুলে যান:

  • যদি আপনি পাসওয়ার্ড ভুলে যান, তাহলে “Forgot Password” অপশনে ক্লিক করে আপনার নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর বা ইমেইল ঠিকানায় নতুন পাসওয়ার্ড পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।

এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আপনি সহজেই আপনার টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন।

টিন সার্টিফিকেট থাকলেই কি কর দিতে হবে

না, টিন (ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) সার্টিফিকেট থাকলেই সবাইকে কর দিতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। টিন সার্টিফিকেট মূলত একটি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর হিসেবে কাজ করে, যা করদাতাদের চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়। তবে টিন সার্টিফিকেট থাকা মানে এই নয় যে আপনি অবশ্যই করের আওতায় পড়বেন। কর দিতে হবে বা না হবে, সেটি নির্ভর করে আপনার আয়ের উপর।

নিচে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:

কাদের কর দিতে হয়:

  1. নির্দিষ্ট আয়ের সীমার উপরে আয়কারী ব্যক্তিরা:
    • সরকার প্রতি বছর আয়কর স্ল্যাব ঘোষণা করে, যার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় কত আয় হলে কর দিতে হবে।
    • যদি কোনো ব্যক্তির আয় সরকার নির্ধারিত ট্যাক্সমুক্ত সীমার উপরে হয়, তখন তাকে কর দিতে হবে।
    • উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা হলো ৩,৫০,০০০ টাকা। যদি কারও আয় এই সীমার চেয়ে বেশি হয়, তবে তাকে কর দিতে হবে।
  2. নির্দিষ্ট পেশা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম:
    • কিছু পেশা বা ব্যবসার জন্য টিন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক হলেও, আয়কর দিতে হবে কিনা, তা আয়ের ওপর নির্ভর করে।
    • যেমন, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট, আইনজীবী, ব্যবসায়ী প্রভৃতির ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট থাকতে হয়, কিন্তু করের জন্য তাদের আয়ের সীমা নির্ধারিত রয়েছে।

কর না দেওয়ার ক্ষেত্রে:

  • যদি আয় করমুক্ত সীমার নিচে হয়: আপনার আয় যদি সরকার নির্ধারিত করমুক্ত সীমার নিচে হয়, তবে টিন সার্টিফিকেট থাকলেও কর দিতে হবে না।
  • টিন বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়: টিন সার্টিফিকেট বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজের জন্যও প্রয়োজন, যেমন:
    • ব্যাংক ঋণ নেওয়া।
    • ব্যবসায়িক লাইসেন্স প্রাপ্তি।
    • গাড়ি নিবন্ধন।
    • সম্পত্তি কেনাবেচা।

এই কাজগুলো করতে টিন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক, কিন্তু এগুলো কর দেওয়ার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।

কর দেওয়া না হলেও রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রয়োজন:

কিছু ক্ষেত্রে, যদিও আপনার কর দেওয়ার প্রয়োজন না থাকতে পারে, আপনাকে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হতে পারে। বিশেষত, যাদের টিন সার্টিফিকেট রয়েছে এবং আয়ের কোনও উৎস আছে, তাদের অনেক ক্ষেত্রেই রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

Leave a Comment